ঢাকা ০৩:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এলডিসি থেকে উত্তরণে প্রস্তুত নয় বাংলাদেশ

রপ্তানি খাতে বছরে ৮ বিলিয়ন ডলার হারানোর শঙ্কা

বাংলাদেশ এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে থাকলেও এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের ফলে শুল্ক সুবিধা হারানোর কারণে দেশের রপ্তানি খাতে বছরে ৮ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

শনিবার (১৫ মার্চ) রাজধানীর এফডিসি মিলনায়তনে ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বর্তমান সরকার সঠিক পথে আছে’ শীর্ষক ছায়া সংসদ বিতর্কে এ মন্তব্য করেন তিনি। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. ফাহমিদা খাতুন।

অনুষ্ঠানে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বাংলাদেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখনও প্রস্তুত নয়। গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে শুল্ক সুবিধা না থাকায় রপ্তানি খাতে বছরে ৮ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হতে পারে।’ এছাড়া, জলবায়ু অর্থায়নসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগিতা কমে যাওয়ার আশঙ্কার কথাও জানান তিনি। তার মতে, এলডিসি স্ট্যাটাস হারানোর ফলে বাংলাদেশকে এখন থেকে বাণিজ্যিক হারে ঋণ নিতে হবে, যা পরিশোধ করা কঠিন হতে পারে।

অনুষ্ঠানে অতীত সরকারের সময় দেওয়া অর্থনৈতিক তথ্যের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের সময় যে অর্থনৈতিক তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, তা ছিল গোজামিলনির্ভর ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) দিয়ে চাহিদামতো তথ্য তৈরি করা হতো।’

গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর নতুন সরকার বলেছিল, আওয়ামী লীগের সময় ঘোষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও অন্যান্য অর্থনৈতিক তথ্য ভুয়া ছিল। এমনকি সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘শেখ হাসিনার সময় দেখানো প্রবৃদ্ধি ছিল পুরোপুরি ভুয়া।’

ক্ষমতার পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এলডিসি থেকে উত্তরণের বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও শুরুতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সময় পিছিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদ ঠিক করে, নির্ধারিত সময়েই—২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর—বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাবে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত হয়েছে, ২০২৬ সালেই বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ করবে। এজন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।’

দেশের বৈদেশিক ঋণের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছরে ঋণের টাকা ব্যাপক অপচয়, দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। ঋণ পরিশোধের জন্য কোনো বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা না থাকায় তা এখন দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

বিশেষ করে চীনের ঋণের বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য দেশ থেকে নেওয়া ঋণের ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স স্পষ্ট থাকলেও চীনের ক্ষেত্রে তা থাকে না। কোনোভাবেই আমাদের ঋণের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।’

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে ভুল ও অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়ে উন্নয়নের গল্প তৈরি করা হয়েছিল। দেশের রিজার্ভ, জিডিপি, রপ্তানি আয়, দারিদ্র্য বিমোচনসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচক নিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছিল।’

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরকার যেমন চাইতো, বিবিএস তেমন তথ্য সরবরাহ করতো। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পর্যন্ত একবার বলেছিলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বোগাস।’

ছায়া সংসদ বিতর্কে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকদের হারিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়।

প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. শেখ মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন, ড. এস এম মোর্শেদসহ আরও অনেকে। বিতর্ক শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

আলোচিত

 সৌদিতে ২৯ রমজানে চাঁদ দেখা গেলে ৩০ মার্চ ঈদ

এলডিসি থেকে উত্তরণে প্রস্তুত নয় বাংলাদেশ

রপ্তানি খাতে বছরে ৮ বিলিয়ন ডলার হারানোর শঙ্কা

০৮:৪৪:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশ এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে থাকলেও এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের ফলে শুল্ক সুবিধা হারানোর কারণে দেশের রপ্তানি খাতে বছরে ৮ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

শনিবার (১৫ মার্চ) রাজধানীর এফডিসি মিলনায়তনে ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বর্তমান সরকার সঠিক পথে আছে’ শীর্ষক ছায়া সংসদ বিতর্কে এ মন্তব্য করেন তিনি। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. ফাহমিদা খাতুন।

অনুষ্ঠানে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বাংলাদেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখনও প্রস্তুত নয়। গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে শুল্ক সুবিধা না থাকায় রপ্তানি খাতে বছরে ৮ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হতে পারে।’ এছাড়া, জলবায়ু অর্থায়নসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগিতা কমে যাওয়ার আশঙ্কার কথাও জানান তিনি। তার মতে, এলডিসি স্ট্যাটাস হারানোর ফলে বাংলাদেশকে এখন থেকে বাণিজ্যিক হারে ঋণ নিতে হবে, যা পরিশোধ করা কঠিন হতে পারে।

অনুষ্ঠানে অতীত সরকারের সময় দেওয়া অর্থনৈতিক তথ্যের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের সময় যে অর্থনৈতিক তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, তা ছিল গোজামিলনির্ভর ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) দিয়ে চাহিদামতো তথ্য তৈরি করা হতো।’

গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর নতুন সরকার বলেছিল, আওয়ামী লীগের সময় ঘোষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও অন্যান্য অর্থনৈতিক তথ্য ভুয়া ছিল। এমনকি সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘শেখ হাসিনার সময় দেখানো প্রবৃদ্ধি ছিল পুরোপুরি ভুয়া।’

ক্ষমতার পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এলডিসি থেকে উত্তরণের বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও শুরুতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সময় পিছিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদ ঠিক করে, নির্ধারিত সময়েই—২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর—বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাবে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত হয়েছে, ২০২৬ সালেই বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ করবে। এজন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।’

দেশের বৈদেশিক ঋণের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছরে ঋণের টাকা ব্যাপক অপচয়, দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। ঋণ পরিশোধের জন্য কোনো বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা না থাকায় তা এখন দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

বিশেষ করে চীনের ঋণের বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য দেশ থেকে নেওয়া ঋণের ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স স্পষ্ট থাকলেও চীনের ক্ষেত্রে তা থাকে না। কোনোভাবেই আমাদের ঋণের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।’

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে ভুল ও অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়ে উন্নয়নের গল্প তৈরি করা হয়েছিল। দেশের রিজার্ভ, জিডিপি, রপ্তানি আয়, দারিদ্র্য বিমোচনসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচক নিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছিল।’

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরকার যেমন চাইতো, বিবিএস তেমন তথ্য সরবরাহ করতো। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পর্যন্ত একবার বলেছিলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বোগাস।’

ছায়া সংসদ বিতর্কে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকদের হারিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়।

প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. শেখ মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন, ড. এস এম মোর্শেদসহ আরও অনেকে। বিতর্ক শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।