ঢাকা ০২:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জেদ্দার মাছবাজার: বাংলাদেশিদের পরিশ্রমে গড়ে ওঠা এক ঐতিহ্য

মাছ বাঙালির অন্যতম প্রধান খাদ্য। ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’—এই প্রচলিত বাক্যটি আমাদের খাদ্যাভ্যাসের গভীরতা বোঝায়। তবে শুধু বাংলাদেশ বা উপমহাদেশেই নয়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও মাছ বেশ জনপ্রিয়। সৌদি নাগরিকদের খাদ্যতালিকায় বিশেষ স্থান দখল করে আছে সামুদ্রিক মাছ। হামুর, শোর, নাজেল, গামার, মিফা (আরাবি) ও বোলতি মাছ সৌদিতে বেশ পরিচিত ও পছন্দের।

আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের মিশেল—জেদ্দার কেন্দ্রীয় মাছবাজার

সৌদি আরবের বাণিজ্যিক শহর জেদ্দা, যেখানে আধুনিকতা আর ঐতিহ্য একসঙ্গে মিলেমিশে গেছে। এই শহরের কেন্দ্রীয় মাছবাজার শুধু একটি ব্যবসায়িক কেন্দ্র নয়, বরং সৌদি ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতিদিন ভোরে শত শত জেলে এখানে তাদের ধরা তাজা সামুদ্রিক মাছ বিক্রি করতে আসেন। চারপাশে সারি সারি রঙিন মাছের দোকান, ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাক, মাছ কাটার শব্দ—সব মিলিয়ে বাজারটি এক উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করে।

মাছের বাজারে বাংলাদেশিদের আধিপত্য

জেদ্দার কেন্দ্রীয় মাছবাজার শুধু সৌদি সংস্কৃতির প্রতিচিত্র নয়, এটি বিদেশি শ্রমিকদের কঠোর পরিশ্রমেরও প্রতিফলন। প্রায় তিন হাজার বছরের পুরনো এই মৎস্যশিল্পে বর্তমানে কাজের প্রধান অংশীদার বিদেশিরা, যার মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। এই কারণেই স্থানীয়দের কাছে বাজারটি ‘বাংলা’ নামেও পরিচিত।

বাজারে কর্মরত বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গভীর রাতেই মাছ ধরার কাজ শুরু হয়, আর সকাল হলেই শতাধিক দোকানে জেলেরা তাদের ধরা মাছ বিক্রির জন্য আনেন। বাজারে টুনা, সিবাস, স্কুইড, কাঁকড়া, লবস্টারসহ নানান ধরনের সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। বিশেষ করে লাল গ্রুপার (নাজিল) ও নেপোলিয়ন রাস (তারাবানি) মাছ এখানকার জনপ্রিয় সামুদ্রিক খাবার।

টাটকা মাছের স্বাদ নিতে বিশেষ আয়োজন

বাজারের পাশেই রয়েছে একটি রেস্তোরাঁ, যেখানে টাটকা মাছ কিনে সঙ্গে সঙ্গে রান্না করে খাওয়ার সুযোগ রয়েছে। চাইলে প্যাকেট করে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও আছে। মাছ ধরার শখ যাদের রয়েছে, তাদের জন্য বাজারে আধুনিক ছিপ, টোপসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও পাওয়া যায়।

জেদ্দার কেন্দ্রীয় মাছবাজার প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে সবচেয়ে ব্যস্ত সময় ভোরবেলা। বিশেষ করে শুক্রবার সকালে বাজারের ভিড় চোখে পড়ার মতো, কারণ সপ্তাহান্তের শুরুতে জেদ্দার বাসিন্দারা তাজা মাছ কিনতে ভিড় করেন।

মক্কার কাকিয়াতেও এসব সামুদ্রিক মাছ কাঁচা ও রান্না করা—দুইভাবেই পাওয়া যায়। প্রতি কেজির দাম ৪০ থেকে ৮০ রিয়ালের মধ্যে (বাংলাদেশি প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা)।

যারা সৌদি আরব ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য জেদ্দার কেন্দ্রীয় মাছবাজার অবশ্যই এক দর্শনীয় স্থান। এখানকার রঙিন মাছের সমারোহ, কর্মব্যস্ত শ্রমিকদের মুখের হাসি ও তাজা সামুদ্রিক খাবারের স্বাদ—সব মিলিয়ে এটি এক অনন্য অভিজ্ঞতা!

আলোচিত

 সৌদিতে ২৯ রমজানে চাঁদ দেখা গেলে ৩০ মার্চ ঈদ

জেদ্দার মাছবাজার: বাংলাদেশিদের পরিশ্রমে গড়ে ওঠা এক ঐতিহ্য

০৮:০৭:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

মাছ বাঙালির অন্যতম প্রধান খাদ্য। ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’—এই প্রচলিত বাক্যটি আমাদের খাদ্যাভ্যাসের গভীরতা বোঝায়। তবে শুধু বাংলাদেশ বা উপমহাদেশেই নয়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও মাছ বেশ জনপ্রিয়। সৌদি নাগরিকদের খাদ্যতালিকায় বিশেষ স্থান দখল করে আছে সামুদ্রিক মাছ। হামুর, শোর, নাজেল, গামার, মিফা (আরাবি) ও বোলতি মাছ সৌদিতে বেশ পরিচিত ও পছন্দের।

আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের মিশেল—জেদ্দার কেন্দ্রীয় মাছবাজার

সৌদি আরবের বাণিজ্যিক শহর জেদ্দা, যেখানে আধুনিকতা আর ঐতিহ্য একসঙ্গে মিলেমিশে গেছে। এই শহরের কেন্দ্রীয় মাছবাজার শুধু একটি ব্যবসায়িক কেন্দ্র নয়, বরং সৌদি ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতিদিন ভোরে শত শত জেলে এখানে তাদের ধরা তাজা সামুদ্রিক মাছ বিক্রি করতে আসেন। চারপাশে সারি সারি রঙিন মাছের দোকান, ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাক, মাছ কাটার শব্দ—সব মিলিয়ে বাজারটি এক উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করে।

মাছের বাজারে বাংলাদেশিদের আধিপত্য

জেদ্দার কেন্দ্রীয় মাছবাজার শুধু সৌদি সংস্কৃতির প্রতিচিত্র নয়, এটি বিদেশি শ্রমিকদের কঠোর পরিশ্রমেরও প্রতিফলন। প্রায় তিন হাজার বছরের পুরনো এই মৎস্যশিল্পে বর্তমানে কাজের প্রধান অংশীদার বিদেশিরা, যার মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। এই কারণেই স্থানীয়দের কাছে বাজারটি ‘বাংলা’ নামেও পরিচিত।

বাজারে কর্মরত বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গভীর রাতেই মাছ ধরার কাজ শুরু হয়, আর সকাল হলেই শতাধিক দোকানে জেলেরা তাদের ধরা মাছ বিক্রির জন্য আনেন। বাজারে টুনা, সিবাস, স্কুইড, কাঁকড়া, লবস্টারসহ নানান ধরনের সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। বিশেষ করে লাল গ্রুপার (নাজিল) ও নেপোলিয়ন রাস (তারাবানি) মাছ এখানকার জনপ্রিয় সামুদ্রিক খাবার।

টাটকা মাছের স্বাদ নিতে বিশেষ আয়োজন

বাজারের পাশেই রয়েছে একটি রেস্তোরাঁ, যেখানে টাটকা মাছ কিনে সঙ্গে সঙ্গে রান্না করে খাওয়ার সুযোগ রয়েছে। চাইলে প্যাকেট করে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও আছে। মাছ ধরার শখ যাদের রয়েছে, তাদের জন্য বাজারে আধুনিক ছিপ, টোপসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও পাওয়া যায়।

জেদ্দার কেন্দ্রীয় মাছবাজার প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে সবচেয়ে ব্যস্ত সময় ভোরবেলা। বিশেষ করে শুক্রবার সকালে বাজারের ভিড় চোখে পড়ার মতো, কারণ সপ্তাহান্তের শুরুতে জেদ্দার বাসিন্দারা তাজা মাছ কিনতে ভিড় করেন।

মক্কার কাকিয়াতেও এসব সামুদ্রিক মাছ কাঁচা ও রান্না করা—দুইভাবেই পাওয়া যায়। প্রতি কেজির দাম ৪০ থেকে ৮০ রিয়ালের মধ্যে (বাংলাদেশি প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা)।

যারা সৌদি আরব ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য জেদ্দার কেন্দ্রীয় মাছবাজার অবশ্যই এক দর্শনীয় স্থান। এখানকার রঙিন মাছের সমারোহ, কর্মব্যস্ত শ্রমিকদের মুখের হাসি ও তাজা সামুদ্রিক খাবারের স্বাদ—সব মিলিয়ে এটি এক অনন্য অভিজ্ঞতা!