ঢাকা ০৯:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মাহমুদ খলিলের গ্রেপ্তার ও বিক্ষোভের সূত্রপাত

ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী খলিলের প্রতি সংহতি জানিয়ে ট্রাম্প টাওয়ারে মার্কিন ইহুদিরা, গ্রেপ্তার ৯৮

ট্রাম্প টাওয়ারে বিক্ষোভ: ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলের প্রতি সংহতি, গ্রেপ্তার ৯৮

নিউইয়র্ক, ১৪ মার্চ ২০২৫: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলের প্রতি সংহতি জানিয়ে ট্রাম্প টাওয়ারের লবিতে বিক্ষোভ করেছেন মার্কিন ইহুদিরা। গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন ইহুদিদের একটি সংগঠনের উদ্যোগে এ বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। তবে পুলিশি অভিযানে ৯৮ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মাহমুদ খলিলের গ্রেপ্তার ও বিক্ষোভের সূত্রপাত

গত শনিবার মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলকে গ্রেপ্তার করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ চলছে। গতকালের ট্রাম্প টাওয়ারের বিক্ষোভ ছিল সেই ধারাবাহিকতারই অংশ। মাহমুদ খলিলের স্ত্রী একজন মার্কিন নাগরিক, এবং তিনি নিজেও কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। এই কারণেই ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করতে চায় বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।

প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য

খলিলের আইনজীবী এবং তাঁর সমর্থকেরা বলছেন, গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের সমালোচনাকে ট্রাম্প প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে ‘সন্ত্রাসবাদে’ সমর্থনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন এই গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং মাহমুদ খলিলকে ‘রাজনৈতিক বন্দী’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

গতকাল বিক্ষোভকারীদের নেতারা জানান, তাঁরা ট্রাম্প টাওয়ারে এই বিক্ষোভ করেছেন প্রেসিডেন্টকে সরাসরি বার্তা দেওয়ার জন্য। উল্লেখ্য, ট্রাম্প টাওয়ারে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের সদরদপ্তর এবং নিউইয়র্কে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বাসভবন অবস্থিত।

বিক্ষোভে ইহুদি সংগঠনের সক্রিয় অংশগ্রহণ

মার্কিন ইহুদিদের সংগঠন ‘জিউশ ভয়েস ফর পিস’ (Jewish Voice for Peace) এই বিক্ষোভের আয়োজন করে। সংগঠনের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (পূর্বের টুইটার) এ দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়েছে, “ইহুদি হিসেবে আমরা গণহারে এই অন্যায় প্রত্যাখ্যান করছি, তাই আমরা ট্রাম্প টাওয়ার দখল করেছি।”

ওই পোস্টে ট্রাম্পের প্রশাসনকে ‘ফ্যাসিবাদী’ উল্লেখ করে আরও বলা হয়, “ফিলিস্তিনিদের এবং যারা মার্কিন অর্থায়নে ইসরায়েল সরকারের গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছেন, তাঁদের অপরাধী করার চেষ্টা করা হলে আমরা চুপ থাকব না। আমরা স্বাধীন ফিলিস্তিনের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।”

বিক্ষোভে অভিনেত্রী ডেব্রা উইংগারের অংশগ্রহণ

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী ডেব্রা উইংগার। বার্তা সংস্থা এপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি মাহমুদ খলিলের পক্ষে দাঁড়িয়েছি, যাকে অবৈধভাবে তুলে নিয়ে গোপন স্থানে আটক রাখা হয়েছে। এটি কি সত্যিই আমেরিকা?”

পুলিশি অভিযান ও গ্রেপ্তার

আল–জাজিরার প্রতিবেদক ক্রিস্টেন সালুমি জানান, ট্রাম্প টাওয়ারের লবি ফাঁকা করতে পুলিশ অভিযান চালায়। বিক্ষোভকারীরা পর্যটকদের মতো সাধারণ পোশাক পরে ভেতরে প্রবেশ করেন, পরে তাঁরা তাঁদের জ্যাকেট খুলে লাল রঙের টি-শার্ট পরেন এবং খলিলের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন।

এরপর পুলিশ তাঁদের মধ্য থেকে ৯৮ জনকে হাতকড়া পরিয়ে আটক করে এবং ‘অসদাচরণের’ অভিযোগ আনে।

খলিলের বর্তমান অবস্থা ও আইনি লড়াই

বর্তমানে মাহমুদ খলিল লুইজিয়ানার একটি অভিবাসন কেন্দ্রে আটক রয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন তাঁকে ফিলিস্তিনে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তবে এক মার্কিন ফেডারেল বিচারপতি সাময়িকভাবে সে সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন। খলিলের আইনজীবীরা তাঁকে নিউইয়র্কে আনার আবেদন করেছেন, যাতে তিনি তাঁর স্ত্রী ও আসন্ন সন্তানের কাছে থাকতে পারেন।

তবে ট্রাম্প প্রশাসন এখনো অনড় অবস্থানে রয়েছে এবং মাহমুদ খলিলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

 

আলোচিত

গৌরীর জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমিরের

মাহমুদ খলিলের গ্রেপ্তার ও বিক্ষোভের সূত্রপাত

ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী খলিলের প্রতি সংহতি জানিয়ে ট্রাম্প টাওয়ারে মার্কিন ইহুদিরা, গ্রেপ্তার ৯৮

০১:৩৬:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫

ট্রাম্প টাওয়ারে বিক্ষোভ: ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলের প্রতি সংহতি, গ্রেপ্তার ৯৮

নিউইয়র্ক, ১৪ মার্চ ২০২৫: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলের প্রতি সংহতি জানিয়ে ট্রাম্প টাওয়ারের লবিতে বিক্ষোভ করেছেন মার্কিন ইহুদিরা। গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন ইহুদিদের একটি সংগঠনের উদ্যোগে এ বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। তবে পুলিশি অভিযানে ৯৮ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মাহমুদ খলিলের গ্রেপ্তার ও বিক্ষোভের সূত্রপাত

গত শনিবার মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলকে গ্রেপ্তার করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ চলছে। গতকালের ট্রাম্প টাওয়ারের বিক্ষোভ ছিল সেই ধারাবাহিকতারই অংশ। মাহমুদ খলিলের স্ত্রী একজন মার্কিন নাগরিক, এবং তিনি নিজেও কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। এই কারণেই ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করতে চায় বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।

প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য

খলিলের আইনজীবী এবং তাঁর সমর্থকেরা বলছেন, গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের সমালোচনাকে ট্রাম্প প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে ‘সন্ত্রাসবাদে’ সমর্থনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন এই গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং মাহমুদ খলিলকে ‘রাজনৈতিক বন্দী’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

গতকাল বিক্ষোভকারীদের নেতারা জানান, তাঁরা ট্রাম্প টাওয়ারে এই বিক্ষোভ করেছেন প্রেসিডেন্টকে সরাসরি বার্তা দেওয়ার জন্য। উল্লেখ্য, ট্রাম্প টাওয়ারে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের সদরদপ্তর এবং নিউইয়র্কে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বাসভবন অবস্থিত।

বিক্ষোভে ইহুদি সংগঠনের সক্রিয় অংশগ্রহণ

মার্কিন ইহুদিদের সংগঠন ‘জিউশ ভয়েস ফর পিস’ (Jewish Voice for Peace) এই বিক্ষোভের আয়োজন করে। সংগঠনের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (পূর্বের টুইটার) এ দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়েছে, “ইহুদি হিসেবে আমরা গণহারে এই অন্যায় প্রত্যাখ্যান করছি, তাই আমরা ট্রাম্প টাওয়ার দখল করেছি।”

ওই পোস্টে ট্রাম্পের প্রশাসনকে ‘ফ্যাসিবাদী’ উল্লেখ করে আরও বলা হয়, “ফিলিস্তিনিদের এবং যারা মার্কিন অর্থায়নে ইসরায়েল সরকারের গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছেন, তাঁদের অপরাধী করার চেষ্টা করা হলে আমরা চুপ থাকব না। আমরা স্বাধীন ফিলিস্তিনের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।”

বিক্ষোভে অভিনেত্রী ডেব্রা উইংগারের অংশগ্রহণ

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী ডেব্রা উইংগার। বার্তা সংস্থা এপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি মাহমুদ খলিলের পক্ষে দাঁড়িয়েছি, যাকে অবৈধভাবে তুলে নিয়ে গোপন স্থানে আটক রাখা হয়েছে। এটি কি সত্যিই আমেরিকা?”

পুলিশি অভিযান ও গ্রেপ্তার

আল–জাজিরার প্রতিবেদক ক্রিস্টেন সালুমি জানান, ট্রাম্প টাওয়ারের লবি ফাঁকা করতে পুলিশ অভিযান চালায়। বিক্ষোভকারীরা পর্যটকদের মতো সাধারণ পোশাক পরে ভেতরে প্রবেশ করেন, পরে তাঁরা তাঁদের জ্যাকেট খুলে লাল রঙের টি-শার্ট পরেন এবং খলিলের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন।

এরপর পুলিশ তাঁদের মধ্য থেকে ৯৮ জনকে হাতকড়া পরিয়ে আটক করে এবং ‘অসদাচরণের’ অভিযোগ আনে।

খলিলের বর্তমান অবস্থা ও আইনি লড়াই

বর্তমানে মাহমুদ খলিল লুইজিয়ানার একটি অভিবাসন কেন্দ্রে আটক রয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন তাঁকে ফিলিস্তিনে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তবে এক মার্কিন ফেডারেল বিচারপতি সাময়িকভাবে সে সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন। খলিলের আইনজীবীরা তাঁকে নিউইয়র্কে আনার আবেদন করেছেন, যাতে তিনি তাঁর স্ত্রী ও আসন্ন সন্তানের কাছে থাকতে পারেন।

তবে ট্রাম্প প্রশাসন এখনো অনড় অবস্থানে রয়েছে এবং মাহমুদ খলিলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।