ঢাকা ০৮:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১০ টাকায় ইফতারি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়া ফেলেছে ১০ টাকার ইফতারি

১০ টাকায় ইফতারি: কুবি শিক্ষার্থীর ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
রমজান মাসে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী মিরাজ। মাত্র ১০ টাকায় পূর্ণাঙ্গ ইফতারি সরবরাহ করছেন তিনি, যা সাধারণত ৫০-৬০ টাকা খরচ করেই কিনতে হয়। এই কার্যক্রম ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।

কেন এই উদ্যোগ?

কাজী মিরাজ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্ন-মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীদের কথা ভেবেই এই উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রতিদিন বাইরে থেকে ৫০-৬০ টাকার ইফতারি কেনা অনেকের জন্য কষ্টসাধ্য। বিনামূল্যে দিলে অনেক শিক্ষার্থী সংকোচবোধ করতে পারে, তাই ১০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করেছেন তিনি। তার ভাষায়, “আমি চাইনি কেউ বিনামূল্যে নিতে সংকোচ বোধ করুক। তাই নামমাত্র মূল্যে এই প্যাকেজটি দিচ্ছি।”

শুরুটা কেমন ছিল?

গাইবান্ধার ছেলে কাজী মিরাজ ছোটবেলা থেকেই সেবামূলক কাজে আগ্রহী। গত রমজানে প্রথমবারের মতো ৭০-৮০ প্যাকেট ইফতার বিতরণ শুরু করেন। শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সাড়া পেয়ে ইফতারির সংখ্যা বাড়াতে হয়, কিন্তু অর্থসংস্থানের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন তিনি।

শিক্ষকদের সহায়তা ও সম্প্রসারণ

এ সময় বিভাগের শিক্ষকরা পাশে দাঁড়ান। পরে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষকরাও সহযোগিতার হাত বাড়ান, ফলে ইফতার প্যাকেটের সংখ্যা ১২০-১৫০ তে উন্নীত হয়। স্থানীয় হোটেল থেকে খাবার সংগ্রহ করে নিজেই বন্ধুদের সহায়তায় প্যাকেট প্রস্তুত করেন মিরাজ। ইফতার মেনুতে থাকে খেজুর, মুড়ি, ছোলা, কলা, জিলাপি, বড়া, আলুর চপসহ প্রায় ১০টি পদ। কিছুদিন বিরিয়ানিও বিতরণ করা হয়।

শিক্ষকদের প্রশংসা

কুবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাসেনা বেগম বলেন, “সমাজে আমাদের যাঁরা ভালো অবস্থানে আছি, তাঁরা কিন্তু এমন উদ্যোগের কথা ভাবিনি। মিরাজ নিজের সামর্থ্যের মধ্যে যা করেছে, তা অবশ্যই প্রশংসনীয়।” তিনি আরও বলেন, “সামান্য ১০ টাকা রাখার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা ‘ওনারশিপ’ তৈরি হচ্ছে, যা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।”

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

এই উদ্যোগ শুধু কুবিতেই সীমাবদ্ধ রাখতে চান না কাজী মিরাজ। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কার্যক্রম চালু করতে চান। তবে একার পক্ষে এটি সম্ভব নয় বলে সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।

তার মতে, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরই এমন উদ্যোগ নেওয়া উচিত। “একবার শুরু করলে এসব কাজ থেমে থাকে না। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি চালু হলে নিম্নমধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীদের অনেক উপকার হবে,” বলেন মিরাজ।

শেষ কথা

কাজী মিরাজের এই মানবিক উদ্যোগ কেবল শিক্ষার্থীদের জন্য সাশ্রয়ী ইফতারি সরবরাহ করছে না, বরং এটি একটি সামাজিক দায়বদ্ধতার দৃষ্টান্ত হয়ে উঠছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা যদি আরও সমন্বিতভাবে এগিয়ে আসে, তবে এই উদ্যোগ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে।

 

আলোচিত

বিপ্লবে শহীদ-আহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াবে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন

১০ টাকায় ইফতারি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়া ফেলেছে ১০ টাকার ইফতারি

০৪:২৬:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫

১০ টাকায় ইফতারি: কুবি শিক্ষার্থীর ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
রমজান মাসে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী মিরাজ। মাত্র ১০ টাকায় পূর্ণাঙ্গ ইফতারি সরবরাহ করছেন তিনি, যা সাধারণত ৫০-৬০ টাকা খরচ করেই কিনতে হয়। এই কার্যক্রম ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।

কেন এই উদ্যোগ?

কাজী মিরাজ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্ন-মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীদের কথা ভেবেই এই উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রতিদিন বাইরে থেকে ৫০-৬০ টাকার ইফতারি কেনা অনেকের জন্য কষ্টসাধ্য। বিনামূল্যে দিলে অনেক শিক্ষার্থী সংকোচবোধ করতে পারে, তাই ১০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করেছেন তিনি। তার ভাষায়, “আমি চাইনি কেউ বিনামূল্যে নিতে সংকোচ বোধ করুক। তাই নামমাত্র মূল্যে এই প্যাকেজটি দিচ্ছি।”

শুরুটা কেমন ছিল?

গাইবান্ধার ছেলে কাজী মিরাজ ছোটবেলা থেকেই সেবামূলক কাজে আগ্রহী। গত রমজানে প্রথমবারের মতো ৭০-৮০ প্যাকেট ইফতার বিতরণ শুরু করেন। শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সাড়া পেয়ে ইফতারির সংখ্যা বাড়াতে হয়, কিন্তু অর্থসংস্থানের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন তিনি।

শিক্ষকদের সহায়তা ও সম্প্রসারণ

এ সময় বিভাগের শিক্ষকরা পাশে দাঁড়ান। পরে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষকরাও সহযোগিতার হাত বাড়ান, ফলে ইফতার প্যাকেটের সংখ্যা ১২০-১৫০ তে উন্নীত হয়। স্থানীয় হোটেল থেকে খাবার সংগ্রহ করে নিজেই বন্ধুদের সহায়তায় প্যাকেট প্রস্তুত করেন মিরাজ। ইফতার মেনুতে থাকে খেজুর, মুড়ি, ছোলা, কলা, জিলাপি, বড়া, আলুর চপসহ প্রায় ১০টি পদ। কিছুদিন বিরিয়ানিও বিতরণ করা হয়।

শিক্ষকদের প্রশংসা

কুবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাসেনা বেগম বলেন, “সমাজে আমাদের যাঁরা ভালো অবস্থানে আছি, তাঁরা কিন্তু এমন উদ্যোগের কথা ভাবিনি। মিরাজ নিজের সামর্থ্যের মধ্যে যা করেছে, তা অবশ্যই প্রশংসনীয়।” তিনি আরও বলেন, “সামান্য ১০ টাকা রাখার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা ‘ওনারশিপ’ তৈরি হচ্ছে, যা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।”

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

এই উদ্যোগ শুধু কুবিতেই সীমাবদ্ধ রাখতে চান না কাজী মিরাজ। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কার্যক্রম চালু করতে চান। তবে একার পক্ষে এটি সম্ভব নয় বলে সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।

তার মতে, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরই এমন উদ্যোগ নেওয়া উচিত। “একবার শুরু করলে এসব কাজ থেমে থাকে না। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি চালু হলে নিম্নমধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীদের অনেক উপকার হবে,” বলেন মিরাজ।

শেষ কথা

কাজী মিরাজের এই মানবিক উদ্যোগ কেবল শিক্ষার্থীদের জন্য সাশ্রয়ী ইফতারি সরবরাহ করছে না, বরং এটি একটি সামাজিক দায়বদ্ধতার দৃষ্টান্ত হয়ে উঠছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা যদি আরও সমন্বিতভাবে এগিয়ে আসে, তবে এই উদ্যোগ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে।