প্রধান উপদেষ্টা দেশের আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সজাগ থাকার নির্দেশ দেন।
একই সঙ্গে তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা যেহেতু এমন পরিস্থিতিতে এসেছি, শান্তি–শৃঙ্খলা বজায় রাখা মস্ত বড় ইস্যু হয়ে গেল। এটাতে আমরা কে কী পরিমাণে অগ্রসর হলাম, কী করণীয়—এটা এক নম্বর বিবেচ্য বিষয়। আইন–শৃঙ্খলায় আমরা যেন বিফল না হই, কারণ এটাতে আমাদের সমস্ত অর্জন সফলভাবে অর্জিত হতে বা বিফলতায় পর্যবসিত হতে পারে। সেটা নিয়ে এই সম্মেলনে আলোচনা হোক। ফিরে যাওয়ার পর যেন এটা বোঝাবুঝির মধ্যে কোনো গলদ না থাকে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এখানে কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত সেগুলো সবার খুব ভালো করেই জানা আছে। পুলিশ প্রশাসনের কাজ কী, সিভিল প্রশাসনের কাজ কী। কো–অরডিনেশনের কাজ কী। কিন্তু যদি বলি ওর কারণে আমারটা হয় না, এটা বলে আমরা কিন্তু পার পাব না। যেহেতু জেলার দায়িত্ব সামগ্রিক ভাবে একজনের ওপরে, তাঁর সঙ্গে কো–অর্ডিনেশন করে সব কিছু করতে হয়। কাজেই সে কো–অডিনেশনের কী সমস্যা, নাকি পৃথক পৃথক ভাবে হবে সেগুলো। এগুলো পরিষ্কার করে নেওয়া। যাতে কাজ করতে গিয়ে আমরা অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়ে না যাই।’
সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নারী-শিশুদের রক্ষা, সংখ্যালঘুদের রক্ষা একটা মস্তবড় দায়িত্ব, কারণ এটার ওপরে সারা দুনিয়া নজর রাখে আমাদের ওপরে। আমরা সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করছি। একটা ছোট্ট ঘটনা সারা দুনিয়াতে বিশাল হয়ে যায়। আমি সেই ভয়ের জন্য বলছি না, এটা আমাদের সরকারের দায়িত্ব হলো সব নাগরিকের সুরক্ষা বিধান করা। আমি সংখ্যালঘুদেরও বলেছি, আপনারা সংখ্যালঘু হিসেবে দাবি কইরেন না, দেশের নাগরিক হিসেবে দাবি করুন। সংবিধান আপনাকে অধিকার দিয়েছে সেই অধিকার আপনাকে সরকারের কাছ থেকে পেতে হবে। এটা আপনাদের পাওনা। আমাদের সরকারের দায়িত্ব সবার সুরক্ষা নিশ্চিত করা। আমি এর সরকার, তারও সরকার।’
সম্মেলনে তাঁকে প্রধান অতিথি সম্বোধন করা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এখানে আমাকে প্রধান অতিথি হিসেবে বলাতে আমি একটু কষ্ট পেলাম। যেন আমাকে বাইরে রাখা হলো এই খেলার মাঠ থেকে। হওয়া উচিত ছিল আমার খেলার ক্যাপ্টেন। কিন্তু আমাকে করলেন অতিথি! আমি অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে চাই না। আমি ক্যাপ্টেন হিসেবে বক্তব্য রাখতে চাই। আমাদের করণীয় কী।’
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যা কিছু করণীয়, সেই করণীয়র দায়িত্বে আমরা সবাই আছি, এমনভাবে যেমন চিন্তা করুন আমরা একটা খেলার—ক্রিকেট বা ফুটবল— খেলার খেলোয়াড়। আমাদের আজকে এই খেলোয়াড়দের সমাবেশ। প্রস্তুতি নেওয়া, যে আমাদের স্ট্র্যাটেজি কী হবে, অবজেকটিভ কী হবে, আমাদের কার কী করণীয়—এসব ঠিক করা।’
অন্তর্বর্তী সরকার এখন খেলার জন্য পুরো প্রস্তুত জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার গঠনের পর থেকে ছয় মাস চলে গেল। এটা আমাদের প্রথম পর্ব। আয়োজন করার জন্য যে সময় লাগে। অনেক ভুল-ভ্রান্তি হয়েছে এই আয়োজনের সময়। এখন সেগুলো ঠিকঠাক করে আমরা পুরো খেলার জন্য প্রস্তুত। সেই প্রস্তুতিটা আমাদের হলো কি না, না হলে কী কী ঘাটতি আছে, সেগুলো ঠিক করা।’
এবার ডিসি সম্মেলনে ৩৪টি কার্য–অধিবেশন হবে। ডিসি সম্মেলন উপলক্ষে বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের কাছ থেকে ১ হাজার ২৪৫টি প্রস্তাব পায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর মধ্যে কার্যপত্রে অন্তর্ভুক্ত হওয়া ৩৫৪টি প্রস্তাবের ওপর সম্মেলনে আলোচনা হবে।
ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম জোরদারকরণ; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম; স্থানীয় পর্যায়ে কর্ম-সৃজন ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন; সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই-গভর্নেন্স; শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ; স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ; পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ রোধ; ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সমন্বয়ের বিষয়গুলোকে আলোচনার জন্য প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ডিসিদের মুক্ত আলোচনা, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে ডিসিদের সভা হবে।
এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ডিসিরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের সঙ্গে ডিসিদের কার্য-অধিবেশন রয়েছে।