আগেকার দিনে ছোট বয়সে কান ফোঁড়ানোর কাজটা মা–খালারাই করতেন। ঘরে থাকা সুই–সুতা দিয়ে দক্ষ হাতে কাজটা সারতেন তাঁরা। কানের সেই সুতা খুলে কিছুদিন পর পরিয়ে দিতেন রুপা বা সোনার রিং। সময় বদলেছে। এখনকার মায়েরা ছোট্ট মেয়ের কান ফোঁড়াতে পারলার বা চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে কান ফোঁড়ানো হয় বলে খুব একটা টের পাওয়া যায় না। তবে শখের বশে কান কেবল ফোঁড়ালেই হবে না, মেনে চলতে হবে কিছু বিশেষ নির্দেশনা। কান ফোঁড়ানোর আগে যেমন প্রস্তুতি আছে, পরেও তেমনি যত্ন নেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। একটু অসাবধানতায় কানের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে অনেক।
কোন বয়সে শিশুর কান ফোঁড়ানো উচিত
আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, মায়েরা কম বয়সেই মেয়েদের কান ফোঁড়াতে পছন্দ করেন। বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি পারলারের কর্ণধার শারমিন কচি বলেন, কান ফোঁড়ানোর নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। তবে কান ফোঁড়ানোর সময় কানের লতির ওপরের হাড় পরিপক্ব হতে হবে, না হলে বয়স হতে হতে ছিদ্র নিচে নেমে আসতে পারে, পরে ভারী দুল পরলে টান লাগবে। আর এমন বয়সে কাজটা করা উচিত, যখন শিশু বুঝতে পারে কান ফোঁড়ানো ব্যাপারটা কী। না হলে কানের দুল টানাটানি করে বা হাতের ঘষায় ঘা তৈরি করে ফেলতে পারে।
যেসব বিষয় মাথায় রাখা জরুরি
১. কান ফোঁড়ানোর আগে কানের লতি ও ব্যবহৃত সুই জীবাণুমুক্ত কি না, নিশ্চিত করতে হবে। দক্ষ হাতে কান ফোঁড়ানোর দায়িত্ব দিতে হবে।
২.ব্যথা হলে হালকা গরম সেঁক দেওয়া যেতে পারে। ক্ষতস্থান যেন সব সময় পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দিলেন শারমিন কচি। ক্ষত সেরে ওঠার জন্য অন্তত সাত দিন সময় দিতে হবে। শিশুকে স্বাভাবিক খাবার ও পর্যাপ্ত তরল খাবার দিতে হবে। সঙ্গে খেতে হবে ভিটামিন সি–জাতীয় ফলমূল। ভিটামিন সি শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে, দ্রুত ক্ষত সারায়। কিছুদিন এড়িয়ে চলতে হবে অ্যালার্জিজাতীয় খাবার, যেমন গরুর মাংস, বেগুন ইত্যাদি। দুল পরানোর আগে কোনো ওষুধ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে দুল পরানোর পর কানে
৩. যদি লালচে বা ফোলা ভাব দেখা দেয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিসেপটিক বা ব্যথানাশক ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। ফোসকা বা অতিরিক্ত ফোলা ভাব অবহেলা করা যাবে না। সংক্রমণের লক্ষণ দেখলে দেরি না করে চিকিৎসক দেখাতে হবে।
৪. ঘন ঘন শিশুর কান ধরা যাবে না। অপরিচ্ছন্ন হাতে কান ধরা যাবে না। ক্ষতস্থান যথাসাধ্য পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
৫. জোর করে বা টানাটানি করে দুল পরানোর চেষ্টা করা যাবে না। শুরুতেই ভারী দুল পরানো যাবে না। সোনা বা এমন ধাতুর দুল পরাতে হবে, যাতে অ্যালার্জির ঝুঁকি কম থাকে।
৬. ছোট্ট শিশুর কানে দুল পরানো আনন্দের মুহূর্ত হলেও এর জন্য সঠিক নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ছোট বয়সে সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি থাকে। এই সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও তার আচরণের দিকে খেয়াল রাখলে শিশুর কান ফোঁড়ানোর অভিজ্ঞতা নিরাপদ ও সুন্দর হয়ে উঠবে। আজকাল ব্যথামুক্ত উপায়েই কান ফোঁড়ানো হয়ে থাকে। বিভিন্ন পারলার ভেদে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় কান ফোঁড়ানো যায়।