কুষ্টিয়ায় প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া, হামলা-ভাঙচুরে আতঙ্ক
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া এবং বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগকে কেন্দ্র করে এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র। হামলার সময় হামলাকারীদের হাতে রামদা, হাসুয়া ও আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার দুপুরে কয়েকশ’ মানুষ লাঠি-সোটা, ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে কুমারখালীতে মহড়া দেয়। এরপর তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়কের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয় এবং আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকেন।
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
হামলার সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, “কয়েকজন পুলিশ সদস্যের পক্ষে এমন বিশাল মব ঠেকানো সম্ভব নয়। তবে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা দিনের আলোতেই অস্ত্র হাতে রাস্তায় ঘুরে বেড়ালেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
হামলার পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র?
হামলার ঘটনায় জামায়াত ও বিএনপির একটি অংশকে দায়ী করেছেন আক্রান্ত সমন্বয়ক আসাদুজ্জামান আলী। তিনি বলেন, “আমার বাবার বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে পরিকল্পিতভাবে আমাদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে।”
তবে জামায়াতের নায়েবে আমির আফজাল হোসাইন এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমরা বারবার সমন্বয়ককে বলেছি তার বাবাকে থামানোর জন্য। সাধারণ জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে এই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।”
তবে হামলার আগের রাতে জামায়াত নেতার বাড়িতে বৈঠকের খবর পাওয়া গেছে। হামলার পর জামায়াত নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে সমন্বয়ক ও তার বাবার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপন করেন।
মিডিয়ার উপর নিপীড়ন
হামলার সময় কেউ যাতে ছবি তুলতে না পারে, সেজন্য অস্ত্রধারীরা বেশ কয়েকজনের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এতে সাংবাদিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
আইনের শাসন না ব্যক্তি প্রতিশোধ?
হামলার ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে তদন্ত ও বিচার হওয়া উচিত, না কি রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট হামলার মাধ্যমে প্রতিশোধ নেওয়া হবে?
স্থানীয়রা দ্রুত এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।