ঢাকা ১২:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হৃদয়ের সেঞ্চুরিকে আড়াল করে ভারতের নায়ক গিল

চরম বিপর্যয়ের মধ্যে অসাধারণ সেঞ্চুরি করলেন তাওহিদ হৃদয়, তবে শুবমান গিলের অপরাজিত সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অভিযান শুরু

হতাশায় দুহাতে মুখ ঢেকে হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে পড়লেন তাসকিন আহমেদ। টিভি ক্যামেরায় ভেসে উঠল রোহিত শর্মার হাস্যোজ্জ্বল মুখ, যেন বলছিলেন— “বড় বাঁচা বেঁচে গেলাম!” ধারাভাষ্যে রবি শাস্ত্রীর কণ্ঠ শোনা গেল, “এটিই কি বাংলাদেশের শেষ সুযোগ ছিল?” উত্তরটি মিলল একটু পরেই— তাসকিনের বলে লোকেশ রাহুলের সহজ ক্যাচ ছেড়ে দিলেন জাকের আলি, আর ম্যাচে ফিরতে পারল না বাংলাদেশ।

ম্যাচের শুরুটা ছিল বাংলাদেশের জন্য দুঃস্বপ্নের মতো। এরপর আসে স্বপ্নের মতো এক জুটি, যেখানে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞার এক ইনিংসে দলকে টেনে তুললেন তাওহিদ হৃদয়। স্কোরবোর্ডে মোটামুটি পুঁজি জমা হয়। বোলাররা লড়াইও করেন, তবে ওই ক্যাচ মিসের পর ম্যাচ জমানোর সব আশা উধাও হয়ে যায়। ভারত ৬ উইকেটে জিতে নেয় ম্যাচ।

শেষ পর্যন্ত সহজ জয় মনে হলেও, ভারতকে পার হতে হয়েছে এক অস্বস্তিকর সময়ের মধ্য দিয়ে। সেই সময়টায় ধৈর্য ধরে, চাপ সামলে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন শুবমান গিল। উইকেট বুঝে, পরিস্থিতি অনুসারে ব্যাটিং করে অপরাজিত ১০১ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।

তবে সেঞ্চুরির গুণে-মানে কোনো অংশে পিছিয়ে ছিলেন না তাওহিদ হৃদয়। বরং তার কাজটা ছিল আরও কঠিন। ৩৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে প্রায় বিধ্বস্ত দলকে অসাধারণ ইনিংসে টেনে তুলেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার প্রথম সেঞ্চুরির ইনিংসে ছিল নিখুঁত ব্যাটিংয়ের সব উপকরণ।

জাকের আলির সঙ্গে গড়েন ১৫৪ রানের জুটি, যা ষষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি এবং ভারতের বিপক্ষে যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ পার্টনারশিপের রেকর্ড। এই জুটির সুবাদেই ২২৮ রানের সম্মানজনক স্কোর দাঁড় করাতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।

চোট কাটিয়ে ফেরা মোহাম্মদ শামি বুঝিয়ে দিলেন, আইসিসি টুর্নামেন্ট মানেই তার রাজত্ব। ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ গুড়িয়ে দেন তিনি।

রান তাড়ায় ভারত দারুণ সূচনা করলেও পরে চাপ বাড়িয়ে তোলে বাংলাদেশ। কিন্তু গিলকে থামানো যায়নি। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে রাহুলের সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন জাকের, যখন তার রান ছিল মাত্র ৯। শেষ পর্যন্ত রাহুল অপরাজিত থাকেন ৪১ রানে। গিলের সঙ্গে ৮৭ রানের জুটিতেই শেষ হয় ম্যাচ।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ শুরুতেই চরম বিপর্যয়ে পড়ে। ২ উইকেটে ২ রান স্কোরবোর্ডে ওঠার পর একের পর এক উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে দল।

প্রথম ওভারেই শামির বলে উইকেট হারান সৌম্য সরকার। নাজমুল হোসেন শান্তও পরের ওভারে হার্শিত রানার বলে ব্যাট ছুঁইয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। মেহেদী হাসান মিরাজ ৫ রান করতে পারলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। তানজিদ হাসান কিছুটা আক্রমণাত্মক শুরু করলেও আকসার প্যাটেলের স্পিনে ২৫ রানেই থামেন।

পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে যায় যখন মুশফিকুর রহিম প্রথম বলেই আউট হয়ে যান। মুহূর্তের মধ্যে ৩৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে ছিল বাংলাদেশ।

এরপর হাল ধরেন হৃদয় ও জাকের। দুজন ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে বাউন্ডারি ভুলে গিয়ে জুটি গড়ার দিকে মন দেন। দলের রান রেট ৩.৫-এর আশপাশে থাকলেও তারা তাড়াহুড়ো করেননি।

জাকের ৮৭ বলে ফিফটি করেন, এটি তার টানা দ্বিতীয় ফিফটি। হৃদয়ও ৮৫ বলে ফিফটি করেন। ফিফটির পরপরই তিনি কুলদিপ ও জাদেজাকে গ্যালারিতে পাঠিয়ে নিজের তাণ্ডবের জানান দেন।

২০২৩ সালের পর প্রথমবার ভারতের স্পিনাররা মাঝের ওভারগুলো (১১-৪০) উইকেট নিতে ব্যর্থ হন।

৪৩তম ওভারে জাকেরকে (১১৪ বলে ৬৮) ফিরিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্রুততম ২০০ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েন শামি।

শেষ দিকে হৃদয় ক্র্যাম্পের কারণে কষ্ট পেলেও ইনিংস ধরে রাখেন। ১১৪ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি, ফিফটি থেকে সেঞ্চুরিতে যেতে লাগে মাত্র ২৯ বল। তবে শেষ পাঁচ ওভারে মাত্র ১৬ রান আসায় বাংলাদেশ বড় স্কোর গড়তে পারেনি।

২২৯ রানের লক্ষ্যে ভারত দুর্দান্ত শুরু করে। প্রথম ১০ ওভারে ৬৯ রান তুলে নেয় তারা। রোহিত শর্মা (৩৬ বলে ৪১) আউট হলেও গিল ও কোহলি ধীরে খেলতে থাকেন। উইকেট ধীর হতে থাকায় কোহলি কিছুটা ধুঁকতে থাকেন, কিন্তু গিল সেট হয়ে যান।

তাসকিন ও হাসানের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের কারণে কিছুক্ষণ রান আটকে থাকলেও, গিলের দৃঢ়তায় ভারতের জয় সহজ হয়ে যায়।

বাংলাদেশের সুযোগ এসেছিল রাহুলের ক্যাচ ফেলে। কিন্তু সেই সুযোগ হাতছাড়া করে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় দল।

বাংলাদেশ: ২২৮ (হৃদয় ১০১, জাকের ৬৮; শামি ৫/৪৭, আকসার ২/৩৩)

ভারত: ২৩০/৪ (গিল ১০১*, রাহুল ৪১*; তাসকিন ২/৪২, মিরাজ ১/৩৮)

ফল: ভারত ৬ উইকেটে জয়ী।

 

আলোচিত

গৌরীর জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমিরের

হৃদয়ের সেঞ্চুরিকে আড়াল করে ভারতের নায়ক গিল

১১:৪২:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

চরম বিপর্যয়ের মধ্যে অসাধারণ সেঞ্চুরি করলেন তাওহিদ হৃদয়, তবে শুবমান গিলের অপরাজিত সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অভিযান শুরু

হতাশায় দুহাতে মুখ ঢেকে হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে পড়লেন তাসকিন আহমেদ। টিভি ক্যামেরায় ভেসে উঠল রোহিত শর্মার হাস্যোজ্জ্বল মুখ, যেন বলছিলেন— “বড় বাঁচা বেঁচে গেলাম!” ধারাভাষ্যে রবি শাস্ত্রীর কণ্ঠ শোনা গেল, “এটিই কি বাংলাদেশের শেষ সুযোগ ছিল?” উত্তরটি মিলল একটু পরেই— তাসকিনের বলে লোকেশ রাহুলের সহজ ক্যাচ ছেড়ে দিলেন জাকের আলি, আর ম্যাচে ফিরতে পারল না বাংলাদেশ।

ম্যাচের শুরুটা ছিল বাংলাদেশের জন্য দুঃস্বপ্নের মতো। এরপর আসে স্বপ্নের মতো এক জুটি, যেখানে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞার এক ইনিংসে দলকে টেনে তুললেন তাওহিদ হৃদয়। স্কোরবোর্ডে মোটামুটি পুঁজি জমা হয়। বোলাররা লড়াইও করেন, তবে ওই ক্যাচ মিসের পর ম্যাচ জমানোর সব আশা উধাও হয়ে যায়। ভারত ৬ উইকেটে জিতে নেয় ম্যাচ।

শেষ পর্যন্ত সহজ জয় মনে হলেও, ভারতকে পার হতে হয়েছে এক অস্বস্তিকর সময়ের মধ্য দিয়ে। সেই সময়টায় ধৈর্য ধরে, চাপ সামলে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন শুবমান গিল। উইকেট বুঝে, পরিস্থিতি অনুসারে ব্যাটিং করে অপরাজিত ১০১ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।

তবে সেঞ্চুরির গুণে-মানে কোনো অংশে পিছিয়ে ছিলেন না তাওহিদ হৃদয়। বরং তার কাজটা ছিল আরও কঠিন। ৩৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে প্রায় বিধ্বস্ত দলকে অসাধারণ ইনিংসে টেনে তুলেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার প্রথম সেঞ্চুরির ইনিংসে ছিল নিখুঁত ব্যাটিংয়ের সব উপকরণ।

জাকের আলির সঙ্গে গড়েন ১৫৪ রানের জুটি, যা ষষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি এবং ভারতের বিপক্ষে যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ পার্টনারশিপের রেকর্ড। এই জুটির সুবাদেই ২২৮ রানের সম্মানজনক স্কোর দাঁড় করাতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।

চোট কাটিয়ে ফেরা মোহাম্মদ শামি বুঝিয়ে দিলেন, আইসিসি টুর্নামেন্ট মানেই তার রাজত্ব। ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ গুড়িয়ে দেন তিনি।

রান তাড়ায় ভারত দারুণ সূচনা করলেও পরে চাপ বাড়িয়ে তোলে বাংলাদেশ। কিন্তু গিলকে থামানো যায়নি। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে রাহুলের সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন জাকের, যখন তার রান ছিল মাত্র ৯। শেষ পর্যন্ত রাহুল অপরাজিত থাকেন ৪১ রানে। গিলের সঙ্গে ৮৭ রানের জুটিতেই শেষ হয় ম্যাচ।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ শুরুতেই চরম বিপর্যয়ে পড়ে। ২ উইকেটে ২ রান স্কোরবোর্ডে ওঠার পর একের পর এক উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে দল।

প্রথম ওভারেই শামির বলে উইকেট হারান সৌম্য সরকার। নাজমুল হোসেন শান্তও পরের ওভারে হার্শিত রানার বলে ব্যাট ছুঁইয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। মেহেদী হাসান মিরাজ ৫ রান করতে পারলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। তানজিদ হাসান কিছুটা আক্রমণাত্মক শুরু করলেও আকসার প্যাটেলের স্পিনে ২৫ রানেই থামেন।

পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে যায় যখন মুশফিকুর রহিম প্রথম বলেই আউট হয়ে যান। মুহূর্তের মধ্যে ৩৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে ছিল বাংলাদেশ।

এরপর হাল ধরেন হৃদয় ও জাকের। দুজন ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে বাউন্ডারি ভুলে গিয়ে জুটি গড়ার দিকে মন দেন। দলের রান রেট ৩.৫-এর আশপাশে থাকলেও তারা তাড়াহুড়ো করেননি।

জাকের ৮৭ বলে ফিফটি করেন, এটি তার টানা দ্বিতীয় ফিফটি। হৃদয়ও ৮৫ বলে ফিফটি করেন। ফিফটির পরপরই তিনি কুলদিপ ও জাদেজাকে গ্যালারিতে পাঠিয়ে নিজের তাণ্ডবের জানান দেন।

২০২৩ সালের পর প্রথমবার ভারতের স্পিনাররা মাঝের ওভারগুলো (১১-৪০) উইকেট নিতে ব্যর্থ হন।

৪৩তম ওভারে জাকেরকে (১১৪ বলে ৬৮) ফিরিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্রুততম ২০০ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েন শামি।

শেষ দিকে হৃদয় ক্র্যাম্পের কারণে কষ্ট পেলেও ইনিংস ধরে রাখেন। ১১৪ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি, ফিফটি থেকে সেঞ্চুরিতে যেতে লাগে মাত্র ২৯ বল। তবে শেষ পাঁচ ওভারে মাত্র ১৬ রান আসায় বাংলাদেশ বড় স্কোর গড়তে পারেনি।

২২৯ রানের লক্ষ্যে ভারত দুর্দান্ত শুরু করে। প্রথম ১০ ওভারে ৬৯ রান তুলে নেয় তারা। রোহিত শর্মা (৩৬ বলে ৪১) আউট হলেও গিল ও কোহলি ধীরে খেলতে থাকেন। উইকেট ধীর হতে থাকায় কোহলি কিছুটা ধুঁকতে থাকেন, কিন্তু গিল সেট হয়ে যান।

তাসকিন ও হাসানের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের কারণে কিছুক্ষণ রান আটকে থাকলেও, গিলের দৃঢ়তায় ভারতের জয় সহজ হয়ে যায়।

বাংলাদেশের সুযোগ এসেছিল রাহুলের ক্যাচ ফেলে। কিন্তু সেই সুযোগ হাতছাড়া করে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় দল।

বাংলাদেশ: ২২৮ (হৃদয় ১০১, জাকের ৬৮; শামি ৫/৪৭, আকসার ২/৩৩)

ভারত: ২৩০/৪ (গিল ১০১*, রাহুল ৪১*; তাসকিন ২/৪২, মিরাজ ১/৩৮)

ফল: ভারত ৬ উইকেটে জয়ী।