আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ হিসাব বছরে রবি আজিয়াটার আয় হয়েছে ৯ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৯ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৩৪ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৬১ পয়সা। ঘোষিত লভ্যাংশ ও অন্যান্য এজেন্ডায় বিনিয়োগকারীদের অনুমোদন নিতে আগামী ২১ এপ্রিল বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আহ্বান করেছে কোম্পানিটি।
আর্থিক ফলাফল সম্পর্কে রবি জানিয়েছে, ২০২৩ হিসাব বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের তুলনায় ২০২৪ হিসাব বছরের একই প্রান্তিকে ভয়েস সেবা থেকে আয় ১ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়লেও ডাটা থেকে আয় ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে। এর প্রধান কারণ ছিল তুমুল বাজার প্রতিযোগিতার মুখে ডাটার দামে নিম্নগামিতা ও মূল্যস্ফীতির কারণে গ্রাহকের ব্যয় সংকোচনের প্রবণতা। এর সঙ্গে নতুন সিম কর ২০০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করায় নতুন গ্রাহক প্রাপ্তিতে বড় বাধা তৈরি হয়েছে। প্রতিযোগীরা নতুন গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে আগ্রাসী ভর্তুকি নীতি গ্রহণ করায় পরিস্থিতি আরো কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ঘনীভূত অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রবির গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ কমেছে। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ রবির সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৬৭ লাখে। একই সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২১ লাখ কমে হয়েছে ৪ কোটি ২৬ লাখ। তবে ফোরজি ব্যবহারকারীর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় পাঁচ লাখের বেশি বেড়েছে। ২০২৪ সাল শেষে রবির সক্রিয় গ্রাহকদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ৯ শতাংশ ছিল ফোরজি ব্যবহারকারী।
রবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এম রিয়াজ রাশিদ বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে আমাদের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার মাধ্যমে গ্রাহকসেবার মানোন্নয়নে কাজ করা। আমরা একটি পরিবর্তনশীল বাজারে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি; পরিচালনগত দক্ষতা ও ডিজিটাল অবকাঠামোয় বিনিয়োগ করে ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরির চেষ্টা করছি আমরা। নিয়ন্ত্রণ কাঠামো ও করনীতি এমন হওয়া উচিত যাতে সুষম ও প্রতিযোগিতামূলক টেলিকম খাত নিশ্চিত হয় এবং রবির মতো অপারেটররা এগোনোর সুযোগ পায়।’
৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২৩ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানিটির পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে রবির ইপিএস ৬১ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৩৫ পয়সা। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) রবি আজিয়াটার শেয়ার সর্বশেষ ২৯ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ার ২০ টাকা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ৯০ পয়সার মধ্যে ওঠানামা করেছে। ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২২ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৭ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে রবি আজিয়াটার পরিচালনা পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ৩৫ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩৪ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ শেষে কোম্পানিটির সমন্বিত এনএভিপিএস দাঁড়ায় ১২ টাকা ৮২ পয়সায়।
৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২১ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের মোট ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে রবি আজিয়াটা। এর মধ্যে ২ শতাংশ নগদ চূড়ান্ত লভ্যাংশ ও ৩ শতাংশ নগদ অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ৩৪ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৩৩ পয়সা। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির সমন্বিত এনএভিপিএস দাঁড়ায় ১২ টাকা ৬৪ পয়সায়, আগের হিসাব বছর শেষে যা ছিল ১৩ টাকা ৯০ পয়সা। ২০২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি।
২০২০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রবি আজিয়াটার অনুমোদিত মূলধন ৬ হাজার কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ৫ হাজার ২৩৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ১ হাজার ৪২৯ কোটি ৩ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৫। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। এছাড়া ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বাকি ৮ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।