ঢাকা ০৩:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মদে আসক্তি কমছে মার্কিন কিশোরদের, বাড়ছে গাঁজায়

এক গবেষণায় দেখা গেছে—যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে কিশোরদের মধ্যে নিকোটিন পাউচ, সিগারেট, অ্যামফেটামিন ও গাঁজার ব্যবহার বেড়েছে। তবে এই বয়সীদের মধ্যে অ্যালকোহলের ব্যবহার অতীতের তুলনায় অনেক কমে গেছে।

বুধবার নিউইয়র্ক পোস্ট জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিউইয়র্কের হাই স্কুলে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিকোটিন পাউচ, বিশেষ করে ‘জাইন’ ব্র্যান্ডের পাউচ খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেক শিক্ষার্থী এখন ক্লাসে বসে মুখে পাউচ রেখে নিকোটিন গ্রহণ করছে। এটি যা সহজে কারও চোখে পড়ে না। গবেষণা বলছে, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে হাই স্কুলে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিকোটিন পাউচ ব্যবহারের হার দ্বিগুণ হয়েছে।

ই-সিগারেট এখনো দেখা গেলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটির ব্যবহার কমতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) জানিয়েছে, ২০১৯ সালে ৫০ লাখ শিক্ষার্থী ই-সিগারেট ব্যবহার করত। বর্তমানে এই সংখ্যাটি ৬০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তবে মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রবণতা বাড়ছে বলে সিডিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে একটি আশ্চর্যজনক প্রবণতা হলো—সিগারেটের আবারও জনপ্রিয় হয়ে ওঠা। বর্তমানে কিছু শিক্ষার্থী এটিকে পুরোনো দিনের ফ্যাশন হিসেবে গ্রহণ করছে। এক শিক্ষার্থীর মতে, এটি এখন ‘লানা ডেল রে’ স্টাইলের পুরোনো ফ্যাশনের অংশ হয়ে উঠেছে।

অতীতের মতো স্কুলের বাথরুমগুলোতে মাদক গ্রহণের প্রবণতা এখনো অটুট রয়েছে। অবস্থা এমন যে, ম্যানহাটনের ল্যাগার্ডিয়া হাই স্কুলে মাদক গ্রহণ ঠেকাতে বাথরুমের দরজা ক্লাস চলাকালীন সময়ে বন্ধ রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বেশির ভাগ শিক্ষার্থী অ্যাডেরাল ও অন্যান্য অ্যামফেটামিন গ্রহণ করছে। কারও কারও জন্য এটি এডিএইচডি চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হলেও, অনেকেই এটিকে মাদকের মতো সেবন করছে। এক শিক্ষার্থী জানান, বেসরকারি স্কুলগুলোর অর্ধেক শিক্ষার্থীই কোনো না কোনোভাবে অ্যামফেটামিন সেবন করছে। একইভাবে কিছু শিক্ষার্থী স্কুল চলার সময় ম্যাজিক মাশরুমও ব্যবহার করছে। নাইট্রাস অক্সাইডের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা চললেও অধিকাংশ শিক্ষার্থী এটি সেবন করার কথা অস্বীকার করেছে।

একটি চমকপ্রদ বিষয় হলো—কিশোরদের মধ্যে অ্যালকোহল সেবনের হার কমে যাচ্ছে। ১৯৯৭ সালে হাই স্কুলে পড়ুয়া ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অ্যালকোহল পান করত। ২০২৪ সালে এই হার ৪২ শতাংশে নেমে এসেছে। এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এখন কেউ আর তেমন মদ পান করে না। সবাই মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত।’

এক শিক্ষক বলেন, ‘আগের মতো এখন আর শিক্ষার্থীরা অ্যালকোহল নিয়ে কথা বলে না। এটি এখন তেমন কোনো সমস্যাই নয়।’

তবে গবেষণায় দেখা গেছে—গাঁজার সহজলভ্যতা কিশোরদের মধ্যে এটির জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী এখন ধূমপান ও ই-সিগারেটের চেয়ে গাঁজার প্রতি বেশি আগ্রহী। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ধূমপান বা গাঁজা কেনার জন্য ভুয়া আইডি ব্যবহার করছে। স্কুলের পাশে থাকা স্থানীয় দোকানগুলোও শিক্ষার্থীদের কাছে সহজেই গাঁজা বিক্রি করছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমান গাঁজার শক্তি আগের তুলনায় অনেক বেশি। দুই দশক আগেও গাঁজায় টিএইচসি-এর মাত্রা ছিল ৮ থেকে ১০ শতাংশ। বর্তমানে এটি ৯০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।

একজন মনোবিজ্ঞানী বলেন, ‘আগের তুলনায় এখনকার গাঁজার প্রভাব অনেক বেশি। বিষয়টি অনেকটা এক বোতল বিয়ারের পরিবর্তে ৮-৯টি টাকিলা শট নেওয়ার মতো।’

শিক্ষার্থীদের এসব আসক্তির প্রবণতা অভিভাবকদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও নীতিনির্ধারকেরা এই বিষয়ে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে।

আলোচিত

গৌরীর জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমিরের

মদে আসক্তি কমছে মার্কিন কিশোরদের, বাড়ছে গাঁজায়

০৭:৩৯:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

এক গবেষণায় দেখা গেছে—যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে কিশোরদের মধ্যে নিকোটিন পাউচ, সিগারেট, অ্যামফেটামিন ও গাঁজার ব্যবহার বেড়েছে। তবে এই বয়সীদের মধ্যে অ্যালকোহলের ব্যবহার অতীতের তুলনায় অনেক কমে গেছে।

বুধবার নিউইয়র্ক পোস্ট জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিউইয়র্কের হাই স্কুলে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিকোটিন পাউচ, বিশেষ করে ‘জাইন’ ব্র্যান্ডের পাউচ খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেক শিক্ষার্থী এখন ক্লাসে বসে মুখে পাউচ রেখে নিকোটিন গ্রহণ করছে। এটি যা সহজে কারও চোখে পড়ে না। গবেষণা বলছে, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে হাই স্কুলে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিকোটিন পাউচ ব্যবহারের হার দ্বিগুণ হয়েছে।

ই-সিগারেট এখনো দেখা গেলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটির ব্যবহার কমতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) জানিয়েছে, ২০১৯ সালে ৫০ লাখ শিক্ষার্থী ই-সিগারেট ব্যবহার করত। বর্তমানে এই সংখ্যাটি ৬০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তবে মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রবণতা বাড়ছে বলে সিডিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে একটি আশ্চর্যজনক প্রবণতা হলো—সিগারেটের আবারও জনপ্রিয় হয়ে ওঠা। বর্তমানে কিছু শিক্ষার্থী এটিকে পুরোনো দিনের ফ্যাশন হিসেবে গ্রহণ করছে। এক শিক্ষার্থীর মতে, এটি এখন ‘লানা ডেল রে’ স্টাইলের পুরোনো ফ্যাশনের অংশ হয়ে উঠেছে।

অতীতের মতো স্কুলের বাথরুমগুলোতে মাদক গ্রহণের প্রবণতা এখনো অটুট রয়েছে। অবস্থা এমন যে, ম্যানহাটনের ল্যাগার্ডিয়া হাই স্কুলে মাদক গ্রহণ ঠেকাতে বাথরুমের দরজা ক্লাস চলাকালীন সময়ে বন্ধ রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বেশির ভাগ শিক্ষার্থী অ্যাডেরাল ও অন্যান্য অ্যামফেটামিন গ্রহণ করছে। কারও কারও জন্য এটি এডিএইচডি চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হলেও, অনেকেই এটিকে মাদকের মতো সেবন করছে। এক শিক্ষার্থী জানান, বেসরকারি স্কুলগুলোর অর্ধেক শিক্ষার্থীই কোনো না কোনোভাবে অ্যামফেটামিন সেবন করছে। একইভাবে কিছু শিক্ষার্থী স্কুল চলার সময় ম্যাজিক মাশরুমও ব্যবহার করছে। নাইট্রাস অক্সাইডের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা চললেও অধিকাংশ শিক্ষার্থী এটি সেবন করার কথা অস্বীকার করেছে।

একটি চমকপ্রদ বিষয় হলো—কিশোরদের মধ্যে অ্যালকোহল সেবনের হার কমে যাচ্ছে। ১৯৯৭ সালে হাই স্কুলে পড়ুয়া ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অ্যালকোহল পান করত। ২০২৪ সালে এই হার ৪২ শতাংশে নেমে এসেছে। এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এখন কেউ আর তেমন মদ পান করে না। সবাই মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত।’

এক শিক্ষক বলেন, ‘আগের মতো এখন আর শিক্ষার্থীরা অ্যালকোহল নিয়ে কথা বলে না। এটি এখন তেমন কোনো সমস্যাই নয়।’

তবে গবেষণায় দেখা গেছে—গাঁজার সহজলভ্যতা কিশোরদের মধ্যে এটির জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী এখন ধূমপান ও ই-সিগারেটের চেয়ে গাঁজার প্রতি বেশি আগ্রহী। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ধূমপান বা গাঁজা কেনার জন্য ভুয়া আইডি ব্যবহার করছে। স্কুলের পাশে থাকা স্থানীয় দোকানগুলোও শিক্ষার্থীদের কাছে সহজেই গাঁজা বিক্রি করছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমান গাঁজার শক্তি আগের তুলনায় অনেক বেশি। দুই দশক আগেও গাঁজায় টিএইচসি-এর মাত্রা ছিল ৮ থেকে ১০ শতাংশ। বর্তমানে এটি ৯০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।

একজন মনোবিজ্ঞানী বলেন, ‘আগের তুলনায় এখনকার গাঁজার প্রভাব অনেক বেশি। বিষয়টি অনেকটা এক বোতল বিয়ারের পরিবর্তে ৮-৯টি টাকিলা শট নেওয়ার মতো।’

শিক্ষার্থীদের এসব আসক্তির প্রবণতা অভিভাবকদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও নীতিনির্ধারকেরা এই বিষয়ে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে।