মাগুরায় আট বছরের এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় করা ধর্ষণের মামলার আসামিদের বাড়িতে আবারও ভাঙচুর চালিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শুক্রবার (১৫ মার্চ) সকালে মাগুরা পৌর এলাকার নিজনান্দুয়ালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
সকাল ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আসামিদের বাড়ির মূল কাঠামো ভেঙে ফেলা হয়েছে, পাশাপাশি সেখান থেকে গাছপালা কেটে নিচ্ছেন স্থানীয়রা। বর্তমানে বাড়ির কিছু দেয়াল ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
আগুনের পর এবার লুটপাট
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই ওই বাড়িতে লুটপাট শুরু হয়। প্রথমে জানালা-দরজা ভেঙে ঘরের আসবাবপত্র লুট করা হয়। পরে সন্ধ্যা সাতটার দিকে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। গভীর রাত পর্যন্ত আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘এই বাড়ির জন্য পুরো গ্রামের বদনাম হয়েছে। আমরা চাই না এই বাড়ির কোনো অস্তিত্ব থাকুক। এ থেকে অন্যরা যেন শিক্ষা নেয়, সেটাই নিশ্চিত করছি।’
ঘটনার পরপরই নিখোঁজ আসামিদের বৃদ্ধা মা
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মামলার মূল অভিযুক্ত হিটু শেখ তার স্ত্রী, দুই সন্তান ও পুত্রবধূ নিয়ে ওই বাড়িতে বসবাস করতেন। ঘটনার পর পুলিশ হিটু শেখ, তার স্ত্রী ও দুই ছেলেকে গ্রেপ্তার করে। এরপর থেকে বাড়িতে একা ছিলেন হিটু শেখের বৃদ্ধা মা। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে তাকেও আর দেখা যায়নি। এলাকাবাসীও তার অবস্থান সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি।
বিএনপির প্রতিক্রিয়া
শুক্রবার সকালে শিশুটির পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা জানাতে শ্রীপুর উপজেলায় যান জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মনোয়ার হোসেন খান। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার চাই, কিন্তু ভাঙচুর ও লুটপাটের মতো ঘটনা সমর্থন করি না। যারা এটি ঘটিয়েছে, তারাও অপরাধ করেছে। আমরা তাদেরও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের ভূমিকা
আসামিদের বাড়িতে আগুন লাগলেও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এদিকে নজর দেওয়ার সুযোগ পাইনি।’
স্থানীয়দের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
এলাকার কেউ কেউ বলছেন, শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ, তাই তারা প্রতিশোধ নিতে এমনটা করেছেন। তবে কেউ কেউ এটিকে লুটপাট বলেও উল্লেখ করেছেন। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘ন্যায়বিচারের দাবিতে আরেকটি অন্যায় হচ্ছে। লুটপাটকে আমরা সমর্থন করি না।’
উল্লেখ্য, পুলিশ ইতোমধ্যে মামলার তদন্ত শুরু করেছে এবং দ্রুততম সময়ে চার্জশিট দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।