ঢাকা ০৪:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
কীভাবে হবে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’?

‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ বলতে কী বোঝাতে চাইছে জাতীয় নাগরিক পার্টি

জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ: ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার ডাক

ঢাকা | শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে দলটির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ঘোষণা করা হয়। দলটির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, এটি হবে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, যা রাষ্ট্রের শাসন কাঠামোতে আমূল পরিবর্তন আনবে।

‘সেকেন্ড রিপাবলিক’— কী বোঝাতে চায় এনসিপি?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ মূলত এমন একটি ধারণা, যা একাধিক দেশের ইতিহাসে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। ফ্রান্স, পোল্যান্ড, কোস্টারিকা ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে পূর্ববর্তী শাসন কাঠামোকে পরিবর্তন করে নতুন শাসনব্যবস্থা চালুর সময় এই ধারণা এসেছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব জানান, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত প্রথম প্রজাতন্ত্রের পর ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ বলতে তাঁরা বোঝাচ্ছেন সংবিধান ও রাষ্ট্রের পুনর্গঠন। তাঁর ভাষায়, “প্রথম রিপাবলিকের পর দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ও ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা চালু হয়েছে। সংবিধানের কাঠামো এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো দল একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে না পারে।”

কীভাবে হবে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’?

জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের মতে, ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধানের বড় পরিবর্তন প্রয়োজন। আরিফুল ইসলাম বলেন, “বর্তমানে সংবিধানের ভিত্তি রেখে শুধুমাত্র সংশোধন করা হয়। কিন্তু ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ হলে পুরো সংবিধান পুনর্লিখন বা পুনর্গঠন সম্ভব।” তিনি আরও জানান, রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী ও স্বাধীন করতে হবে, যাতে নাগরিকদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হয়।

সংবিধান বাতিলের দাবি ও রাজনৈতিক বিতর্ক

জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা প্রথমে বর্তমান সংবিধান সম্পূর্ণ বাতিলের পক্ষে অবস্থান নিলেও পরে এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি। তবে তাঁরা মনে করেন, নতুন রাষ্ট্র কাঠামো গঠনের ভিত্তিতেই সংবিধানের বড় পরিবর্তন আসবে।

‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ধারণার পটভূমি

‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ধারণাটি প্রথম আলোচনায় আসে ২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর, যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি এটি উত্থাপন করে। তারা ‘জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটের আলোকে’ নতুন রাষ্ট্র গঠনের ডাক দেয়। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার পরও ব্যাপক সমর্থন না পাওয়ায় বিষয়টি কিছুটা আড়ালে চলে যায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে এটি আবারও আলোচনায় এসেছে।

পরবর্তী পরিকল্পনা কী?

জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা জানান, তাঁরা জনগণের মধ্যে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ধারণার গুরুত্ব বোঝানোর জন্য ধারাবাহিক প্রচার চালাবেন। পাশাপাশি সরকারের কাছে সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রস্তাবনা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এনসিপির এই রাজনৈতিক অবস্থান দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন আলোচনা তৈরি করেছে। তবে এটি কতটুকু বাস্তবায়নযোগ্য হবে, তা সময়ই বলে দেবে।

– বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকা

আলোচিত

গৌরীর জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমিরের

কীভাবে হবে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’?

‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ বলতে কী বোঝাতে চাইছে জাতীয় নাগরিক পার্টি

০৪:৫১:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫

জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ: ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার ডাক

ঢাকা | শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে দলটির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ঘোষণা করা হয়। দলটির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, এটি হবে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, যা রাষ্ট্রের শাসন কাঠামোতে আমূল পরিবর্তন আনবে।

‘সেকেন্ড রিপাবলিক’— কী বোঝাতে চায় এনসিপি?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ মূলত এমন একটি ধারণা, যা একাধিক দেশের ইতিহাসে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। ফ্রান্স, পোল্যান্ড, কোস্টারিকা ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে পূর্ববর্তী শাসন কাঠামোকে পরিবর্তন করে নতুন শাসনব্যবস্থা চালুর সময় এই ধারণা এসেছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব জানান, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত প্রথম প্রজাতন্ত্রের পর ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ বলতে তাঁরা বোঝাচ্ছেন সংবিধান ও রাষ্ট্রের পুনর্গঠন। তাঁর ভাষায়, “প্রথম রিপাবলিকের পর দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ও ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা চালু হয়েছে। সংবিধানের কাঠামো এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো দল একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে না পারে।”

কীভাবে হবে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’?

জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের মতে, ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধানের বড় পরিবর্তন প্রয়োজন। আরিফুল ইসলাম বলেন, “বর্তমানে সংবিধানের ভিত্তি রেখে শুধুমাত্র সংশোধন করা হয়। কিন্তু ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ হলে পুরো সংবিধান পুনর্লিখন বা পুনর্গঠন সম্ভব।” তিনি আরও জানান, রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী ও স্বাধীন করতে হবে, যাতে নাগরিকদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হয়।

সংবিধান বাতিলের দাবি ও রাজনৈতিক বিতর্ক

জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা প্রথমে বর্তমান সংবিধান সম্পূর্ণ বাতিলের পক্ষে অবস্থান নিলেও পরে এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি। তবে তাঁরা মনে করেন, নতুন রাষ্ট্র কাঠামো গঠনের ভিত্তিতেই সংবিধানের বড় পরিবর্তন আসবে।

‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ধারণার পটভূমি

‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ধারণাটি প্রথম আলোচনায় আসে ২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর, যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি এটি উত্থাপন করে। তারা ‘জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটের আলোকে’ নতুন রাষ্ট্র গঠনের ডাক দেয়। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার পরও ব্যাপক সমর্থন না পাওয়ায় বিষয়টি কিছুটা আড়ালে চলে যায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে এটি আবারও আলোচনায় এসেছে।

পরবর্তী পরিকল্পনা কী?

জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা জানান, তাঁরা জনগণের মধ্যে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ধারণার গুরুত্ব বোঝানোর জন্য ধারাবাহিক প্রচার চালাবেন। পাশাপাশি সরকারের কাছে সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রস্তাবনা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এনসিপির এই রাজনৈতিক অবস্থান দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন আলোচনা তৈরি করেছে। তবে এটি কতটুকু বাস্তবায়নযোগ্য হবে, তা সময়ই বলে দেবে।

– বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকা