ঢাকা ০৩:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শান্তি আলোচনা নাকি নতুন সংকট?

বাগ্‌বিতণ্ডার পর ট্রাম্প কি আর অস্ত্র সহায়তা দেবেন, কী করবেন জেলেনস্কি

ট্রাম্প-জেলেনস্কির বাগ্‌বিতণ্ডা: ন্যাটোর জন্য বড় সংকেত?

ওয়াশিংটন, শনিবার: হোয়াইট হাউসে শুক্রবারের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে তীব্র বাগ্‌বিতণ্ডা হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই উত্তেজনা দুঃখজনক হলেও অপ্রত্যাশিত ছিল না। ট্রাম্পের প্রশাসন শুরু থেকেই ইউক্রেনের প্রতি সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করে আসছিল।

২০২২ সালে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছিল। তবে ট্রাম্প বরাবরই এই সহায়তার বিরোধিতা করে এসেছেন এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর যুদ্ধের দ্রুত অবসানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যদিও কীভাবে তিনি এটি করবেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি।

শান্তি আলোচনা নাকি নতুন সংকট?

২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর ট্রাম্প গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। বিশ্লেষকদের ধারণা, ইউক্রেনকে বাদ দিয়েই শান্তি আলোচনার পথ তৈরি করছেন ট্রাম্প, যা কিয়েভ এবং ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হলেও ট্রাম্প এ ব্যাপারে অনাগ্রহ দেখিয়েছেন। তিনি বরং জোর দিয়ে বলেছেন, পুতিন তাঁকে যথেষ্ট ‘সম্মান’ করেন এবং চুক্তি লঙ্ঘন করবেন না।

ওভাল অফিসে উত্তপ্ত মুহূর্ত

শুক্রবারের বৈঠকে ট্রাম্প এবং তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স অভিযোগ করেন যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে সমর্থন দিয়েছে, তার জন্য জেলেনস্কি যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেননি। এই মন্তব্যের পর বৈঠকে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায় এবং শেষ পর্যন্ত জেলেনস্কি ও তাঁর প্রতিনিধি দলকে হোয়াইট হাউস থেকে চলে যেতে বলা হয়।

ট্রাম্প পরে বলেন, ‘যখন তিনি (জেলেনস্কি) শান্তির জন্য প্রস্তুত হবেন, তখন তিনি ফিরে আসতে পারেন।’ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই অবস্থান ইউক্রেনের জন্য নতুন সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ন্যাটোর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন

ট্রাম্প-জেলেনস্কির এই সংঘাত শুধু ইউক্রেনের জন্য নয়, পুরো ন্যাটোর জন্য একটি বড় সংকেত হতে পারে। ইউরোপীয় দেশগুলো ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বৈঠকের পরপরই ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।

ইউক্রেনের রাজনীতি বিশ্লেষক ভলোদিমির ফেসেনকো এএফপিকে বলেন, ‘এ সবই ঘটারই কথা ছিল। আজ না হলে কাল এ সংঘর্ষ হতোই।’

এরপর কী?

আইসিজির উপদেষ্টা ব্রায়ান ফিনুকেন জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনে অস্ত্র সহায়তা পাঠানোর প্রক্রিয়া বাতিল করতে পারে। বাইডেন প্রশাসনের শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই অস্ত্র সহায়তা অনুমোদন করা হয়েছিল, যা এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

বৈঠকের পর ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া ইউক্রেনের পক্ষে রুশ বাহিনীকে ঠেকানো কঠিন হয়ে যাবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, ওয়াশিংটনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক পুনরুদ্ধার সম্ভব। আমি চাই ট্রাম্প সত্যিই আমাদের পক্ষে থাকুন।’

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের বর্তমান নীতির ফলে ন্যাটোর ঐক্য দুর্বল হতে পারে এবং ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।

 

আলোচিত

গৌরীর জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমিরের

শান্তি আলোচনা নাকি নতুন সংকট?

বাগ্‌বিতণ্ডার পর ট্রাম্প কি আর অস্ত্র সহায়তা দেবেন, কী করবেন জেলেনস্কি

০৪:২৩:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫

ট্রাম্প-জেলেনস্কির বাগ্‌বিতণ্ডা: ন্যাটোর জন্য বড় সংকেত?

ওয়াশিংটন, শনিবার: হোয়াইট হাউসে শুক্রবারের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে তীব্র বাগ্‌বিতণ্ডা হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই উত্তেজনা দুঃখজনক হলেও অপ্রত্যাশিত ছিল না। ট্রাম্পের প্রশাসন শুরু থেকেই ইউক্রেনের প্রতি সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করে আসছিল।

২০২২ সালে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছিল। তবে ট্রাম্প বরাবরই এই সহায়তার বিরোধিতা করে এসেছেন এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর যুদ্ধের দ্রুত অবসানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যদিও কীভাবে তিনি এটি করবেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি।

শান্তি আলোচনা নাকি নতুন সংকট?

২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর ট্রাম্প গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। বিশ্লেষকদের ধারণা, ইউক্রেনকে বাদ দিয়েই শান্তি আলোচনার পথ তৈরি করছেন ট্রাম্প, যা কিয়েভ এবং ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হলেও ট্রাম্প এ ব্যাপারে অনাগ্রহ দেখিয়েছেন। তিনি বরং জোর দিয়ে বলেছেন, পুতিন তাঁকে যথেষ্ট ‘সম্মান’ করেন এবং চুক্তি লঙ্ঘন করবেন না।

ওভাল অফিসে উত্তপ্ত মুহূর্ত

শুক্রবারের বৈঠকে ট্রাম্প এবং তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স অভিযোগ করেন যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে সমর্থন দিয়েছে, তার জন্য জেলেনস্কি যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেননি। এই মন্তব্যের পর বৈঠকে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায় এবং শেষ পর্যন্ত জেলেনস্কি ও তাঁর প্রতিনিধি দলকে হোয়াইট হাউস থেকে চলে যেতে বলা হয়।

ট্রাম্প পরে বলেন, ‘যখন তিনি (জেলেনস্কি) শান্তির জন্য প্রস্তুত হবেন, তখন তিনি ফিরে আসতে পারেন।’ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই অবস্থান ইউক্রেনের জন্য নতুন সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ন্যাটোর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন

ট্রাম্প-জেলেনস্কির এই সংঘাত শুধু ইউক্রেনের জন্য নয়, পুরো ন্যাটোর জন্য একটি বড় সংকেত হতে পারে। ইউরোপীয় দেশগুলো ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বৈঠকের পরপরই ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।

ইউক্রেনের রাজনীতি বিশ্লেষক ভলোদিমির ফেসেনকো এএফপিকে বলেন, ‘এ সবই ঘটারই কথা ছিল। আজ না হলে কাল এ সংঘর্ষ হতোই।’

এরপর কী?

আইসিজির উপদেষ্টা ব্রায়ান ফিনুকেন জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনে অস্ত্র সহায়তা পাঠানোর প্রক্রিয়া বাতিল করতে পারে। বাইডেন প্রশাসনের শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই অস্ত্র সহায়তা অনুমোদন করা হয়েছিল, যা এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

বৈঠকের পর ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া ইউক্রেনের পক্ষে রুশ বাহিনীকে ঠেকানো কঠিন হয়ে যাবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, ওয়াশিংটনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক পুনরুদ্ধার সম্ভব। আমি চাই ট্রাম্প সত্যিই আমাদের পক্ষে থাকুন।’

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের বর্তমান নীতির ফলে ন্যাটোর ঐক্য দুর্বল হতে পারে এবং ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।