আইনেও কমছেনা গ্রামীণফোনের মনোপলি, বাজারের প্রায় অর্ধেক দখলে
- ১২:৪৯:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫
- / 209
দেশের টেলিকম খাতে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন লিমিটেড দীর্ঘদিন ধরে একক আধিপত্য ধরে রেখেছে, যা অর্থনীতিতে মনোপলি হিসেবে পরিচিত। যুক্তরাজ্যে ২৫ শতাংশ বাজার অংশীদারত্বকে মনোপলি ধরা হলেও বাংলাদেশে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ৪০ শতাংশ বাজার দখলকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতা’ বা এসএমপি হিসেবে চিহ্নিত করে। গ্রাহক সংখ্যা ও আয়ের ভিত্তিতে কয়েক বছর আগে গ্রামীণফোনকে এসএমপি ঘোষণা করা হয় এবং নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও মনোপলি কমেনি; বরং কোম্পানিটির আয় ও মুনাফা আরও বেড়েছে।
বর্তমানে দেশে চারটি অপারেটর—গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিটক—প্রায় ১৯ কোটি গ্রাহককে সেবা দিচ্ছে। ৩২ হাজার ২৯৮ কোটি টাকার এই খাতে ২০২৪ সালে গ্রামীণফোনের আয় দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা, যা বাজারের প্রায় ৫০ শতাংশ। একই সময়ে রবির আয় ছিল ৯ হাজার ৯৫০ কোটি, বাংলালিংকের ৫ হাজার ৯৭৮ কোটি এবং টেলিটকের মাত্র ৫৫২ কোটি টাকা। কর-পরবর্তী নিট মুনাফায় গ্রামীণফোন ৩ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা আয় করেছে, যা রবির তুলনায় পাঁচ গুণের বেশি।
২০১৯ সালে গ্রামীণফোনকে এসএমপি ঘোষণা করে বিটিআরসি কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করলেও কোম্পানিটি আদালতে গিয়ে কিছু বিধি বাতিল করাতে সক্ষম হয়। বর্তমানে তিন ধরনের বিধিনিষেধ কার্যকর আছে—নতুন সেবা চালুর ক্ষেত্রে বিটিআরসির অনুমোদন বাধ্যতামূলক, মোবাইল টার্মিনেশন রেটে (এমটিআর) ৩ পয়সার ব্যবধান এবং মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটিতে (এমএনপি) গ্রামীণফোন থেকে অন্য অপারেটরে যেতে ৬০ দিন ও অন্য অপারেটর থেকে গ্রামীণফোনে যেতে ৯০ দিনের লকিং পিরিয়ড। এছাড়া প্রায় এক বছর নতুন সিম বিক্রি বন্ধ ছিল।
বাজারে প্রতিযোগিতা আনার লক্ষ্যে বিটিআরসি বর্তমানে এসএমপি নীতিমালার কার্যকারিতা পুনর্মূল্যায়ন করছে। এ জন্য ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবু বকর সিদ্দিকের নেতৃত্বে একটি কমিটি তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে। গ্রামীণফোন ও প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোও নীতিমালা পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে।
গ্রাহক অংশীদারত্বের দিক থেকে ২০২০ সালে গ্রামীণফোনের দখল ছিল ৪৬.৪৪ শতাংশ, যা ২০২৪ সালে ৪৫ শতাংশে দাঁড়ায় এবং ২০২৫ সালের জুনে বেড়ে হয় ৪৫.৯১ শতাংশ। আয়ও প্রায় স্থিতিশীলভাবে শীর্ষে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রবির বাজার অংশীদারত্ব বর্তমানে ৩০.৪৬ শতাংশ এবং আয় ৯ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। তৃতীয় স্থানে বাংলালিংক, যার বাজার অংশীদারত্ব ২১.২১ শতাংশ এবং আয় ৫ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে টেলিটক, যার বাজার অংশীদারত্ব মাত্র ৩.৫ শতাংশ এবং আয় ৫২৫ কোটি টাকা।
রবি ও বাংলালিংক সম্প্রতি প্রতিযোগিতা কমিশনের কাছে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে তারা ডাম্পিং প্রাইসে সিম বিক্রি করছে। রবির অভিযোগের প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রতিযোগিতা আইনের কিছু ব্যত্যয় পাওয়া গেছে, যা কমিশন সভায় উপস্থাপন করা হবে। বাংলালিংকের অভিযোগও কমিশন বিবেচনায় নিয়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন এএইচএম আহসান জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে কিছু বিচ্যুতি ধরা পড়েছে। তদন্তে অভিযোগ সত্য হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। গ্রামীণফোন যেহেতু একটি প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান, তাই এর বাজার ক্ষমতার অপব্যবহারের ঝুঁকি সবসময় থাকে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

















